Smart Citizenship Card: ভারতে এতদিন নাগরিকত্ব প্রমাণ ছিল সবচেয়ে বড় জটিলতার একটি বিষয়। আধার কার্ড, ভোটার আইডি, পাসপোর্ট বা জন্মসনদ থাকলেও এগুলো কখনই আইনত নাগরিকত্বের একক প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা যেত না। ফলে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বহু সময় সরকারি দপ্তরের কাজে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এই দীর্ঘ অনিশ্চয়তার অবসান ঘটাতেই কেন্দ্র সরকার ঘোষণা করেছে স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড ২০২৫ প্রকল্প।
এটি হবে ভারতের প্রতিটি নাগরিকের জন্য একক পরিচয়পত্র, যা শুধুমাত্র সরকারি কাজে নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি, আর্থিক লেনদেন ও ভ্রমণেও নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। সরকারের দাবি, এই উদ্যোগ ভারতের ইতিহাসে নাগরিকত্ব প্রমাণের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
কেন প্রয়োজন স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড
স্মার্ট কার্ড চালুর পেছনে সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য হলো নাগরিকদের জন্য নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়া সহজ করা। এতদিন পর্যন্ত—
১) বিভিন্ন নথি থাকলেও তা নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য ছিল না।
২) গ্রামীণ ও প্রান্তিক মানুষেরা নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পেরে সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হতেন।
৩) বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সনাক্তকরণে জটিলতা দেখা দিত।
৪) একাধিক আইডি থাকায় প্রমাণ যাচাইয়ের প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হয়ে যেত।
এই সব সমস্যার একক সমাধান দিতেই স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড আনা হচ্ছে।
কী থাকবে Smart Citizenship Card এ
স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড হবে আধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর ও সুরক্ষিত পরিচয়পত্র। এখানে থাকছে—
১) নাগরিকের নাম, ছবি ও স্বাক্ষর
২) জন্মতারিখ ও জন্মস্থান উল্লেখ
৩) ইউনিক সিটিজেনশিপ নাম্বার (UCN)
৪) ডিজিটাল চিপ ও QR কোড
৫) হোলোগ্রাফিক সিকিউরিটি ফিচার
৬) বায়োমেট্রিক তথ্য (ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইরিশ স্ক্যান)
এই কার্ড স্ক্যান করলেই সঙ্গে সঙ্গে জানা যাবে কার্ডধারী প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক কি না।
নাগরিকত্ব প্রমাণের বর্তমান নিয়ম
বর্তমানে ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী—
১) ১৯৫০ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত: ভারতে জন্মালেই নাগরিকত্ব পাওয়া যেত।
২) ১৯৮৭ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত: বাবা বা মায়ের একজন ভারতীয় হলে নাগরিকত্ব।
৩) ২০০৪-এর পর: বাবা-মা দুজনকেই ভারতীয় হতে হবে।
এই নিয়ম বহু ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করেছে। বিশেষত যাদের জন্মসনদ নেই বা নথিপত্র অসম্পূর্ণ, তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণ প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। স্মার্ট কার্ড চালু হলে এই সমস্যার অবসান ঘটবে।
কবে চালু হচ্ছে এই প্রকল্প
১) ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচিত কয়েকটি রাজ্যে ট্রায়াল রান হবে।
২) ট্রায়াল সফল হলে ২০২৬ সালের মধ্যে সারা দেশে চালু করা হবে।
৩) প্রথম ধাপে নির্দিষ্ট কিছু জেলায় বিতরণ শুরু হবে।
৪) ধাপে ধাপে প্রতিটি নাগরিককে বিনামূল্যে এই কার্ড দেওয়া হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া কীভাবে হবে
যদিও এখনও চূড়ান্ত নির্দেশিকা প্রকাশ হয়নি, তবে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে—
১) অনলাইনে বা স্থানীয় সরকারি অফিসে আবেদন করা যাবে।
২) জন্ম তারিখ, ঠিকানা ও পরিচয়পত্র জমা দিতে হবে।
৩) বায়োমেট্রিক ও ছবি সংগ্রহ করা হবে।
৪) যাচাই প্রক্রিয়ার পর স্মার্ট কার্ড আবেদনকারীর ঠিকানায় পৌঁছে যাবে।